স্প্যাম আপডেট থেকে বাঁচতে দেখুন ১৪টি উপায়

আজ এই পোস্টটিতে আমরা জানতে চলেছি এবারের স্প্যাম আপডেটে কি কি কারনে আপনার সাইটের র‍্যাংক ডাউন হয়েছে। তাই যদি ইতিমধ্যে আপনার সাইট হিট খেয়ে থাকে তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য।

যাদের সাইটের কোনো সমস্যা হয়নি চাইলে তারাও এই পোস্টটি দেখতে পারেন। কেননা আলোচনাকৃত চেকলিস্টগুলোর বিষয়বস্তু থেকে বিরত থাকলে ভবিষ্যতে আপনার ভুল করার সম্ভবনা থাকবে না।

তো চলুন দেখে নেই সেই চেকলিস্টগুলোঃ
1.Link Spam
2.Keyword Stuffing
3.Cloaking
4.Doorway pages
5.Hacked Content
6.Hidden Content
7.Scraping other
8.Artificial Content
9.Malware
10.Misleading Functionality
11.Sneaky Redirects
12.Lazy Affiliate Pages
13.User generated spam
14.Real Scam

1.Link Spam

লিংক স্প্যাম হলো যখন আপনি লিংক অথবা ব্যাকলিংক গুগলের সাথে প্রতারণা করে তৈরি করে থাকেন। যেমনঃ

Purchased Links: যখন আপনি টাকার বিনিময়ে অন্য সাইট থেকে ব্যাকলিংক নিয়ে থাকেন।

Exchanged Links: অন্য সাইটের সাথে যখন আপনি ব্যাকলিংক এক্সচেঞ্জ অর্থাৎ আপনার সাইটের লিংক তার সাইটে, তার সাইটের লিংক আপনার সাইটে দিয়ে থাকেন। একে লিংক এক্সচেঞ্জ বলে যা গুগলের পলিসির বাহিরে।

Automated Links: বিভিন্ন অনলাইন টুলসের মাধ্যমে ব্যাকলিংক নিলে একে অটোমেটিক লিংক বলা হয়।

Forum Signature Links: যখন আপনি কোনো ফোরাম সাইটের প্রোফাইলে আপনার ওয়েবসাইটের লিংক ম্যানশন করেন তাকে ফোরাম সিগনেচ্যার লিংক বলা হয়।

আপনি প্রোফাইলে আপনার সাইটের নাম ম্যানশন করতে পারেন কিন্তু লিংক ম্যানশন করা থেকে বিরত থাকুন।

Footer Links: অনেকেই ব্যাকলিংক পাওয়ার আশায় বিভিন্ন ব্লগ থিমে নিজের সাইটের লিংক ইম্পোর্ট করে থাকে। যা আপনার সাইটের র‍্যাংকিং এ মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

Low Quality Bookmarking Links: ইন্টারনেটে বিভিন্ন সাইট পাওয়া যায় যেখানে যে কেউ যেকোনো সাইটের লিংক প্রকাশ করতে পারে। এইসব লিংকগুলোকে বুকমার্কিং বা ডিরেক্টরি লিংক বলা হয়।

উপরের দেওয়া ৬টি উপায়ে যদি আপনি আপনার সাইটের জন্য লিংক নিয়ে থাকেন। তাহলে এগুলো আপনার সাইটের র‍্যাংক ডাউন হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে।

এখন প্রশ্ন হলো কিভাবে এসব লিংক সহজেই রিমুভ করা যায়?
এসব লিংক রিমুভ করার জন্য গুগলের Disavow Tools রয়েছে। যার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনার সাইটের স্প্যাম লিংকগুলো রিমুভ হয়ে যাবে।

রিমুভ বলতে লিংক রিমুভ হবেনা কিন্তু গুগল এইসব লিংকগুলো আর প্রাধান্য দিবে না।

Link Disavow করার নিয়ম

ধাপ ১ঃ আপনার স্প্যাম লিংকগুলো কালেক্ট করুন।

ধাপ ২ঃ স্প্যাম লিংকগুলো .txt ফরমেটে একটি ফাইলে সেইভ করুন।

ধাপ ৩ঃ Google Disavow Tool এ গিয়ে Select Property তে ক্লিক করে আপনার ডোমেইন নেম সিলেক্ট করুন।

Google Disavow Tool এর স্ক্রিনশটে Select Property অপশন মার্ক করা
Select Property অপশন

ধাপ ৪ঃ Upload Disavow List বাটনে ক্লিক করে আপনার স্প্যাম লিংক লিস্ট এর .txt ফাইলটি আপলোড করুন।

Google Disavow Tool এর স্ক্রিনশটে Upload Disavow Link মার্ক করা
Upload Disavow Link অপশন

2.Keyword Stuffing

আপনি যদি জোর করে অধিক পরিমানে আপনার সাইটের কন্টেন্ট এ একই কিওয়ার্ড ব্যবহার করেন তাহলে এইসব কাজকে কিওয়ার্ড স্টাফিং বলা হয়।

আর কিওয়ার্ড স্টাফিং গুগলের পলিসির বাহিরে। তাই আপনার সাইটের কোনো কন্টেন্ট এ যদি আপনি কিওয়ার্ড স্টাফিং করে থাকেন। তাহলে এক্ষুনি তা ফিক্স করুন।

3.Cloaking

আপনি যখন কোনো পেজে গুগল বটকে এক কন্টেন্ট দেখান এবং ভিজিটরদের অন্য কন্টেন্ট দেখান তাকে ক্লকিং কন্টেন্ট বলা হয়।

তাই যদি আপনার সাইটে এরকম কন্টেন্ট থাকে যেখানে ভিজিটর এবং গুগল বটকে আলাদা আলাদা কন্টেন্ট দেখানো হচ্ছে তাহলে এক্ষুনি ওই পেজটি রিমুভ করুন।

4.Doorway pages

মনে করেন আপনি অথবা একজন রাইটারকে দিয়ে ১ হাজার ওয়ার্ড এর একটি পোস্ট লিখালেন। পোস্টটা এরকম “ঢাকার মধ্যে সেরা ১০টি মোবাইলের দোকান”।

এখন আপনি যদি এই কন্টেন্টটি একাধিক কপি করেন। অর্থাৎ শুধু ঢাকার জায়গায় “চট্টগ্রাম”, “রাজশাহী”, “খুলনা” এভাবে একই কন্টেন্ট ব্যবহার করাকে বুঝিয়েছি।

আরও সহজভাবে…
ঢাকার মধ্যে সেরা ১০টি মোবাইলের দোকান
চট্রগ্রাম মধ্যে সেরা ১০টি মোবাইলের দোকান
রাজশাহী মধ্যে সেরা ১০টি মোবাইলের দোকান

এখানে কন্টেন্ট এর মধ্যে শুধু স্থানের নাম পরিবর্তন করে সেইম কন্টেন্ট বার বার পাবলিস করেন তাহলে সেটা Doorway Page এর ভেতর পরবে এবং আপনার সাইটের র‍্যাংকিং ক্ষমতা কমে যাবে।

5.Hacked Content

যদি আপনার সাইটে হ্যাকিং সম্পর্কিয় কন্টেন্ট থাকে তাহলে এক্ষুনি সেই কন্টেন্টগুলিকে রিমুভ করুন। কেননা হ্যাকিং কন্টেন্টও গুগলের নীতিমালার বাহিরে।

তাই যদি আপনার সাইটে হ্যাকিং সম্পর্কে কোনো পোস্ট থাকে তাহলে সেই পোস্ট ডিলিট করে দিন।

6.Hidden Content

যখন কোনো নির্দিষ্ট পেজের কিছু অংশ ভিজিটরদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা হয় তখন তাকে হিডেন কন্টেন্ট বলে।

কারণ আপনার কন্টেন্ট ভিজিটর দেখে টেক্সট, ইমেজ আকারে। কিন্তু একই কন্টেন্ট গুগল বট দেখে কোড আকারে। তাই স্বাভাবিকভাবেই হিডেন কন্টেন্ট গুগল ধরে ফেলতে পারবে।

হিডেন কন্টেন্ট সাধারণত যেরকম হয়ঃ
ফন্ট সাইজ জিরো করে দেওয়া।
সাইটের ব্যাকগ্রাউন্ড এর কালার ফন্টের কালারে ব্যবহার করা।
CSS এর মাধ্যমে ফন্ট ট্রান্সপারেন্ট করে দেওয়া।
টেক্সট এর উপরে ইমেজ ব্যবহার করা।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ হিডেন কন্টেন্টও গুগলের পলিসি ভঙ্গ করে। তাই সাইটে কোনো কন্টেন্ট লুকিয়ে রাখবেন না। যদি আগেই লুকিয়ে রাখেন তাহলে এক্ষুনি তা ফিক্স করুন।

7.Scraping other

স্ক্র‍্যাপিং আদার বলতে অন্যের কন্টেন্ট নিজের সাইটে সরাসরি পাবলিস করা, অন্যের কন্টেন্ট কিছুটা চেঞ্জ করে নিজের সাইটে পাবলিস করা অথবা অন্যের কন্টেন্ট স্পিন বা টুলের সাহায্যে রিরাইট করাকে বুঝানো হয়েছে।

এরকমটা যদি আপনিও করে থাকেন তাহলে আপনার সাইট স্প্যাম আপডেটে হিট খাওয়ার অন্যতম কারণ এটি।

8.Artificial Content

যদি আপনার সাইটে আর্টিফিশিয়াল কন্টেন্ট (AI) থাকে তাহলে তা রিমুভ করতে হবে। স্প্যাম আপডেটে সাইট হিট খাওয়ার জন্য অন্যতম কারণ এটি।

কেননা বর্তমানে (২০২২ সাল অনুযায়ী) গুগল AI বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট দিয়ে তৈরিকৃত কনটেন্ট ভালো চোখে দেখে না।

9.Malware

ম্যালওয়্যার মানে হচ্ছে আপনার সাইট কেউ হ্যাক করে এরকম কোডিং করে এতে ভিজিটরের ডিভাইসে বিভিন্ন ম্যালওয়্যার সফটওয়্যার, ফাইল, লিংকে ক্লিক করতে বাধ্য করে।

যদি আপনার সাইটে এরকমটা হয়ে থাকে কিংবা নিজেই বিভিন্ন ম্যালওয়্যার সফটওয়্যার, ফাইল, লিংক কন্টেন্ট এ দিচ্ছেন তাহলে তা এক্ষুনি রিমুভ করুন।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ বিভিন্ন ক্র‍্যাক থিম বা প্লাগিনে এরকম কিছু করা হয়ে থাকে। তাই আপনার সাইট এক্ষুনি চেক করে দেখুন ম্যালওয়্যার জাতীয় কোনো কিছু আছে কিনা।

10.Misleading Functionality

যখন আপনি আপনার কন্টেন্ট এ ভিজিটরকে কোনো একটি নির্দিষ্ট জিনিস দিবেন বলে প্রমিস করেন কিন্তু তা কন্টেন্ট এর ভেতর দেন না তাহলে সেটা মিসলেডিং ফাংশনালিটি ওয়েব স্প্যাম এর আন্ডারে পরবে।

সহজভাবে…
মনে করুন আজ আপনার সাইটে একটি পোস্ট লিখলেন “গরুর রচনার পিডিএফ ডাউন’লোড” এই বিষয়ে।
অথচ পুরো কন্টেন্ট এর ভেতর আপনি ভিজিটরকে কোথাও পিডিএফ ফাইল দিলেন না।

তাহলে গুগলের কাছে এটা মিসলেডিং ফাংশনালিটি হিসিবে গন্য হবে ও স্প্যাম সাইট হিসেবে চিহ্নিত করা হবে এবং আপনার সাইট র‍্যাংক হারাবে।

11.Sneaky Redirects

যখন আপনি ভিজিটর এবং বটকে পেজ এর ভিন্ন URL এ পাঠান তাহলে সেটাকে স্নিকি রিডাইরেক্ট বলে গন্য করা হবে।

তবে আবার যদি একই পেজ এর জন্য মোবাইলের ভিজিটরদের জন্য আলাদা URL এবং ডেক্সটপ ভিজিটরদের জন্য আলাদা URL এ জোর রিডাইরেক্ট করা হয় তখন সেটাকেও স্নিকি রিডাইরেক্ট বলা হয়ে থাকে।

তাই আপনার সাইটের পেজ এর URL গুগল বট, মোবাইল ভিজিটর এবং ডেক্সটপ ভিজিটরদের জন্য একই তা নিশ্চিত করুন। দুই ডিভাইসের জন্য আলাদা URL এ রিডাইরেক্ট করা থেকে বিরত থাকুন।

12.Lazy Affiliate Pages

যদি আপনি বিভিন্ন ই-কমার্স বা ব্র‍্যান্ড প্রোডাক্ট রিভিও সাইটে থাকা টেক্সট, ইমেজ কপি করে আপনার এফিলিয়েট সাইটে পাবলিস করেন তাহলে স্প্যাম আপডেটে আপনি হিট খাবেন।

তাই নিজে লিখুন, কপি করা থেকে বিরত থাকুন, আপনার এফিলিয়েট সাইটের টেক্সট, ইমেজ ইউনিক করুন।

13.User generated spam

অনেকের সাইটের কমেন্টে ভিজিটর লিংক দিয়ে স্প্যাম করে থাকে। একে ইউজার জেনারেটেড স্প্যাম বলা হয়ে থাকে। তাই আপনার সাইটকে নিয়মিত মডারেট করতে হবে। স্প্যাম কমেন্টগুলো এপ্রুভ করা যাবে না।

এছাড়াও আপনার সাইটের পোস্ট যদি ইউজার নিজে ইডিট করতে পারে এবং যদি সেখানে সবাই লিংক দেয়, অথবা অনেকের সাইটে গেস্ট পোস্ট করার ফিচার রয়েছে। সেখানে যদি বেশিরভাগ ইউজার অধিক পরিমানে লিংক করে তাহলে সেটিও এই রুলস এর মধ্যে পড়বে।

তাই আপনার সাইট ইউজার জেনারেটেড স্প্যাম এর হাত থেকে বাচাতে নিয়মিত মডারেট করুন। স্প্যামিং লিংক সাইট থেকে রিমুভ করুন।

14.Real Scam

অন্য ওয়েবসাইটকে কপি করাকে রিয়েল স্ক্যাম বলা হয়। এখানে কন্টেন্ট কপি করা বুঝানো হয়নি। এখানে বুঝানো হয়েছে…
যদি কোনো ব্রান্ড ওয়েবসাইট এর মতো হুবহু নকল করেন অর্থাৎ ইউজার যদি আপনার সাইটকে ওই ব্রান্ড ওয়েবসাইট ভেবে ধোকা খায় তাহলে সেটা রিয়েল স্ক্যাম হবে।

তাই আপনি যদি কোনো বড় ওয়েবসাইটের ডিজাইন, কালার, নাম কপি করেন তাহলে এটা রিয়েল স্ক্যাম এর আওতায় পরবে। তাই নিজের সাইটকে নিজের মন মতো ডিজাইন করুন। কপি করা থেকে বিরত থাকুন।

সর্বশেষ কথা

যদি আপনার সাইট অলরেডি স্প্যাম আপডেটে হিট খেয়ে থাকে তাহলে উপরে দেওয়া ১৪টি পয়েন্ট মাথায় রেখে আপনার সাইট পরিবর্তন করুন।

যাদের সাইট র‍্যাংক ডাউন হয়নি তা এইসব কাজগুলো থেকে বিরত থাকুন।

আজকের যাইহোক ডটকম এর এই আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনার ব্লগার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এই পোস্ট বিষয়ক যেকোনো সমস্যা আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। সরাসরি কথা বলতে যাইহোক ডটকম ফেসবুক পেজ এ ম্যাসেজ দিন।

Comments 4

  • ধন্যবাদ নূরনবী ভাই। যদিও আমার সাইটে কিছুটা হিট খেয়েছিল কিন্তু আস্তে আস্তে আবার আগের মত হয়ে যাচ্ছে।

  • ভাই কোন রেফারেন্স দিলেন না। ১ নাম্বারটা তো আমার সাথে মিলে গেছে🙄 কোরাতে দুমছে ব্যাকলিংক করছি। আর অন্য সাইটের সাথে ব্যাকলিংক আদান প্রধান করছি।

    • quora তে দুমছে ব্যাকলিংক করলে সমস্যা নাই। তবে প্রোফাইলে সাইট লিংক না দেওয়ার চেষ্টা করবেন। লিংক এক্সচেঞ্জ করলে গুগল ধরে ফেললে মারা খাবেন।

      যেই বিষয়টা নিয়া সন্দেহ হচ্ছে সেই বিষয়টা নিয়া গুগলে সার্চ করেন। অনেক বড় বড় ইংরেজি সাইট পাবেন ওখানেই বলা থাকবে। আমি তাড়াহুড়ো করে পোস্টটা করছি তাই এত রেফারেন্স দেওয়ার সময় হয়নি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *