Connect with us

রাঙ্গামাটির সেরা ৭ টি দর্শনীয় স্থানের নাম ও কেন সেই জায়গা বিখ্যাত

রাঙ্গামাটির সেরা ৭ টি দর্শনীয় স্থানের নাম

দর্শনীয় স্থান

রাঙ্গামাটির সেরা ৭ টি দর্শনীয় স্থানের নাম ও কেন সেই জায়গা বিখ্যাত

রাঙামাটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি অপরূপ প্রাকৃতিক জেলা, যা পাহাড়, লেক ও নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। চট্টগ্রাম বিভাগের এই পার্বত্য জেলা পর্যটকদের জন্য একটি স্বর্গরাজ্যস্বরূপ। বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে রাঙামাটির আকর্ষণ শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সীমাবদ্ধ নয়, এখানকার আদিবাসী সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস এবং হস্তশিল্প পর্যটকদের মুগ্ধ করে। আজকের এই লেখায় আমরা জানবো রাঙামাটির সেরা ৭টি দর্শনীয় স্থানের নাম এবং কেন এই স্থানগুলো এত জনপ্রিয় ও বিখ্যাত।

১. কাপ্তাই লেক – কৃত্রিম সৌন্দর্যের বিস্ময়

রাঙামাটির সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ও দর্শনীয় স্থান হলো কাপ্তাই লেক। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কৃত্রিম লেক, যা ১৯৬০ সালে কর্ণফুলী নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। এই লেকের সৌন্দর্য এক কথায় অপরূপ। নৌকাভ্রমণ, ফিশিং, জলবিহার, সূর্যাস্ত দেখা – সব মিলিয়ে একটি আদর্শ ভ্রমণ অভিজ্ঞতা দেয়। কাপ্তাই লেকের চারপাশ ঘিরে থাকা সবুজ পাহাড়, নীল জলরাশি ও হালকা ঠান্ডা হাওয়া পর্যটকদের শান্তি দেয়।

২. সাজেক ভ্যালি – মেঘের রাজ্য

যদিও সাজেক মূলত খাগড়াছড়ি জেলার অংশ, তবুও রাঙামাটি থেকে এর সহজ সংযোগ থাকার কারণে এটি অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে রাঙামাটির পর্যটকদের কাছে। সাজেক ভ্যালিকে ‘মেঘের রাজ্য’ বলা হয়, কারণ এখানে প্রায় সারাবছর মেঘ আর পাহাড়ের লুকোচুরি খেলা চলে। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত রিসোর্ট, আদিবাসী সংস্কৃতি এবং সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য এই স্থানকে বিশেষ করে তোলে।

৩. শুভলং জলপ্রপাত – প্রকৃতির সরাসরি ছোঁয়া

শুভলং ঝর্ণা বা শুভলং জলপ্রপাত কাপ্তাই লেকের মাঝখানে অবস্থিত একটি বিখ্যাত ঝর্ণা। এটি শুধুমাত্র নৌকা করে পৌঁছানো যায়, যা নিজেই একটি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। বর্ষাকালে এই ঝর্ণার পানি আরও প্রবল হয়ে ওঠে এবং তার সৌন্দর্য দ্বিগুণ হয়। শুভলং এর মূল আকর্ষণ হলো প্রাকৃতিক ঝর্ণা থেকে ছিটকে পড়া ঠাণ্ডা পানি ও তার শব্দ, যা এক অনন্য অভিজ্ঞতা তৈরি করে।

৪. রাঙামাটি হিল ট্র্যাক ও ঝুলন্ত ব্রিজ – শহরের প্রাণকেন্দ্র

রাঙামাটির শহরের মাঝখানে অবস্থিত ঝুলন্ত সেতু (Hanging Bridge) পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। এটি মূলত কাপ্তাই লেকের ওপর নির্মিত একটি ঝুলন্ত কাঠের ব্রিজ যা ছবির মতো মনোমুগ্ধকর। এখানকার হিল ট্র্যাক রোডে হাঁটা, সাইকেল চালানো এবং ছবি তোলার জন্য এটি আদর্শ স্থান। এই ব্রিজ রাঙামাটির প্রতীক হয়ে উঠেছে এবং প্রায় প্রতিটি পর্যটকই এখানে এসে ছবি তুলেন।

৫. রাজবন বিহার – ধর্মীয় ঐতিহ্য ও ইতিহাস

রাজবন বিহার রাঙামাটির অন্যতম প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ বিহার। এটি শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক নিদর্শনও। এখানে অনেক বিদেশি ভিক্ষু ও পর্যটক আসেন। বিহারের আশেপাশের পরিবেশ খুব শান্ত ও আধ্যাত্মিক। প্রতিদিন ভক্তরা এখানে প্রার্থনা করেন, ধ্যান করেন এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করেন। ইতিহাসপ্রেমী ও আধ্যাত্মিকতা খোঁজার পর্যটকদের জন্য রাজবন বিহার অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থান।

৬. তুষি রিসোর্ট এলাকা – আধুনিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশের মিলন

তুষি রিসোর্ট শুধু একটি থাকার জায়গা নয়, বরং এটি নিজেই একটি ছোট ভ্রমণ গন্তব্য। এখানকার আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন কটেজ, পাহাড়ি দৃশ্য, নিজস্ব ঘাট এবং খাদ্যসংগ্রহের আয়োজন পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। যারা আধুনিক জীবনযাত্রার মধ্যে থেকেও প্রাকৃতিক পরিবেশে কিছুদিন কাটাতে চান, তাদের জন্য তুষি রিসোর্ট আদর্শ।

৭. চিংহ্লং বৌদ্ধ বিহার ও প্যাগোডা – নান্দনিক স্থাপত্য

চিংহ্লং বিহার রাঙামাটির আরেকটি জনপ্রিয় ধর্মীয় ও স্থাপত্যশৈলীর স্থান। এখানে রয়েছে একটি সোনালি রঙের প্যাগোডা যা মায়ানমার ও থাইল্যান্ডের স্থাপত্যরীতিতে তৈরি। এই স্থানের মূল আকর্ষণ হচ্ছে বিহার সংলগ্ন সিঁড়ি ও পাহাড়ি দৃশ্য। এ স্থানটি শুদ্ধতা, স্থাপত্য আর ধর্মীয় অভিজ্ঞতা একসাথে নিতে চাইলে উপযুক্ত।

রাঙামাটি এমন একটি জেলা যেখানে প্রকৃতি তার রূপকে সাজিয়ে রেখেছে পরিপূর্ণভাবে। পাহাড়, লেক, ঝর্ণা, বিহার, ব্রিজ ও সংস্কৃতির অপূর্ব মিশেলে গড়ে উঠেছে এই জেলার পর্যটন শিল্প। যাঁরা সাপ্তাহিক ছুটিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, তাঁদের জন্য রাঙামাটির এই সাতটি স্থান নিঃসন্দেহে সেরা পছন্দ হতে পারে। শুধু ভ্রমণের জন্যই নয়, শান্তি, আধ্যাত্মিকতা ও নতুন সংস্কৃতি জানার জন্যও রাঙামাটি একটি অতুলনীয় অভিজ্ঞতা দেয়।

Continue Reading
You may also like...
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More in দর্শনীয় স্থান

To Top