দর্শনীয় স্থান
মেঘালয়ের সীমানা সংলগ্ন দর্শনীয় স্থান গুলোর নাম
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত সিলেট বিভাগের পাহাড়ি অঞ্চল প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য আশীর্বাদ। এই অঞ্চলের অনেক জায়গা ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত। ফলে সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাহাড়-নদী-ঝরনা, সবুজ বনরাজি এবং ঝিরিপথ যেন সরাসরি মেঘালয়ের ছোঁয়া পেয়েছে।
মেঘালয় সীমান্তবর্তী এই স্থানগুলোতে বাংলাদেশের ভ্রমণপ্রেমীরা ভিড় জমায় বিশেষত বর্ষাকাল ও শীত মৌসুমে। শান্ত প্রকৃতি, স্বচ্ছ পানির ধারা ও দূর পাহাড়ের দৃশ্য – সব মিলিয়ে এক মোহময় অভিজ্ঞতা তৈরি করে।
এখানে আমরা তুলে ধরছি মেঘালয় সংলগ্ন বাংলাদেশের পাঁচটি দর্শনীয় স্থান, যেগুলো আপনাকে দেবে পাহাড় ও প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার এক অসাধারণ অনুভূতি।
জাফলং – স্বচ্ছ নদী আর পাথরের রাজ্য
অবস্থান: সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলা
দূরত্ব: সিলেট শহর থেকে প্রায় ৬২ কিমি
জাফলং হলো সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় সীমান্তবর্তী পর্যটন এলাকা। এখানকার স্বচ্ছ পানির নদী “পিয়াইন”, যার ওপারে ভারতের ডাওকি শহর দেখা যায়। নদীর নিচে থাকা পাথরগুলো এতটাই পরিষ্কারভাবে দৃশ্যমান যে মনে হয় যেন কাচের ওপর দিয়ে হাঁটছেন।
এছাড়া এখানে রয়েছে খাসিয়া আদিবাসীদের গ্রাম, চা-বাগান এবং পাহাড়ি ঝরনার মৃদু ধারা। বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢলে নদীর রূপ আরও মোহনীয় হয়ে ওঠে।
বিছানাকান্দি – পাথর, পানি আর পাহাড়ের মিলনমেলা
অবস্থান: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়ন
দূরত্ব: সিলেট শহর থেকে প্রায় ৪০ কিমি
বিছানাকান্দি আরেকটি মনোমুগ্ধকর স্থান, যা মেঘালয়ের পাহাড় ঘেঁষে অবস্থিত। পাহাড় থেকে নেমে আসা স্রোতধারার পানির ধারা ও ঝর্ণা এখানে এসে পাথরের বুকে আছড়ে পড়ে। পুরো এলাকা যেন নদী, পাথর ও সবুজ পাহাড়ের এক চমৎকার শিল্পকর্ম।
বর্ষাকালে বিছানাকান্দি পুরোপুরি জেগে ওঠে। পায়ে হেঁটে বা নৌকা করে এই এলাকায় ঘোরা যায়। ফটোগ্রাফির জন্য এটি এক আদর্শ জায়গা।
লোভাছড়া চা-বাগান – প্রকৃতির নির্জনতা ও পাহাড়ি বাতাস
অবস্থান: গোয়াইনঘাট, সিলেট
দূরত্ব: জাফলং থেকে প্রায় ১৫ কিমি
মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে থাকা লোভাছড়া চা-বাগান একটি চমৎকার ঘোরার স্থান। এখানকার ঘন চা-বাগান, পাহাড়ি হাওয়া ও পাখির কিচিরমিচির আপনাকে অন্য জগতে নিয়ে যাবে।
এখান দিয়ে ভারতের লোভাছড়া সীমান্তের পাহাড়ও দেখা যায়। পাহাড়ি পথ ধরে হেঁটে যেতে যেতে প্রকৃতির একান্ত সৌন্দর্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলার মতো অভিজ্ঞতা।
পান্থুমাই – বাংলার কোল ঘেঁষে থাকা ভারতীয় ঝরনার শব্দ
অবস্থান: গোয়াইনঘাট, সিলেট
বিশেষত্ব: ভারত থেকে দৃশ্যমান মেঘালয়ের “বরহিল” ঝরনা
পান্থুমাই গ্রাম বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর গ্রাম। এখান থেকে মেঘালয়ের বরহিল ঝরনা (Barhill Falls) স্পষ্ট দেখা যায়। ঝরনার সাদা স্রোত আর তার গর্জন যেন কানে এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি জাগিয়ে তোলে।
পান্থুমাই যেতে হলে প্রথমে হাদারপাড়া পর্যন্ত গাড়িতে, তারপর নদী পথে নৌকায় যেতে হয়। ঝরনার পাশাপাশি এখানকার গ্রামের জীবনযাত্রা এবং পাহাড়ি প্রকৃতিও মনোমুগ্ধকর।
লালাখাল – নীলচে পানির নদী ও শান্ত নৌকা ভ্রমণ
অবস্থান: জৈন্তাপুর উপজেলা, সিলেট
বিশেষ বৈশিষ্ট্য: স্বচ্ছ, নীলাভ পানির নদী ‘সারি নদী’
লালাখাল মূলত এক অদ্ভুত সৌন্দর্যপূর্ণ স্থান যেখানে পানির রঙ নীলচে-সবুজ। ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নেমে আসা স্রোত এখানে এসে মিলিত হয়েছে। নদী পথে নৌকাভ্রমণ, সাইলেন্ট প্রকৃতি, এবং আশেপাশের পাহাড়-সবুজ একে তৈরি করেছে এক অনন্য গন্তব্য।
শীতকালে এখানে পানি স্বচ্ছ ও কম প্রবাহমান হয়, ফলে নদীর নিচ পর্যন্ত দেখা যায়। পরিবার বা দম্পতিরা দিনব্যাপী ভ্রমণের জন্য এ জায়গা চমৎকার।
মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা বাংলাদেশের এই স্থানগুলো যেন প্রকৃতির এক নিখুঁত চিত্রকলা। পাহাড়, ঝরনা, স্বচ্ছ নদী, সবুজ বন আর নির্জনতা – সবকিছু মিলিয়ে এরা একেকটি জীবন্ত সৌন্দর্যের উৎস। আপনি যদি প্রকৃতি ও নৈসর্গিক সৌন্দর্য ভালোবাসেন, তাহলে মেঘালয়ের সীমান্তঘেঁষা এই পাঁচটি গন্তব্য আপনার ভ্রমণ তালিকার শীর্ষে রাখা উচিত।
