Connect with us

বান্দরবানের পাহাড়ি দর্শনীয় স্থান – নীলগিরি, নীলাচল, রুমা বাজার ট্যুর গাইড

বান্দরবানের পাহাড়ি দর্শনীয় স্থান – নীলগিরি, নীলাচল, রুমা বাজার ট্যুর গাইড

দর্শনীয় স্থান

বান্দরবানের পাহাড়ি দর্শনীয় স্থান – নীলগিরি, নীলাচল, রুমা বাজার ট্যুর গাইড

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এক বিস্ময়কর প্রাকৃতিক রত্ন হচ্ছে বান্দরবান। পাহাড়, মেঘ, ঝরনা ও উপজাতীয় সংস্কৃতিতে ভরপুর এই জেলা প্রকৃতি ও শান্তিপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য গন্তব্য। বান্দরবান শহরের আশেপাশে এবং দূরবর্তী অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে আছে নীলগিরি, নীলাচল, রুমা বাজার, বগালেক, থানচি ইত্যাদি অসাধারণ পাহাড়ি সৌন্দর্য। এর মধ্যে নীলগিরি, নীলাচল এবং রুমা বাজার এমন কিছু স্থান যা একজন পর্যটকের জীবনে অন্তত একবার না ঘুরলেই নয়।

এই গাইডে আমরা জানবো কীভাবে আপনি এই পাহাড়ি অঞ্চলে যেতে পারেন, কোথায় থাকবেন, কী দেখবেন, খরচ কত পড়বে এবং নিরাপত্তার দিকগুলো কেমন। যারা প্রকৃতিকে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই আর্টিকেল এক পরিপূর্ণ সহচর।

নীলগিরি – মেঘের রাজ্য

নীলগিরি বান্দরবানের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং পর্যটকপ্রিয় স্থানগুলোর একটি। এটি মূল শহর থেকে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার দূরে, থানচি রোডে অবস্থিত।

কীভাবে যাবেন?

বান্দরবান শহর থেকে চান্দের গাড়ি বা জিপ ভাড়া করে আপনি ১.৫ থেকে ২ ঘণ্টায় নীলগিরি পৌঁছাতে পারবেন। সড়ক পথটি কন্ট্রোলড, অর্থাৎ সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত, তাই নিরাপত্তা ভালো এবং অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষেধ।

দর্শনীয়তা

নীলগিরিতে গেলে প্রথমেই যে জিনিস চোখে পড়বে তা হলো পাহাড়ের চূড়ায় মেঘের খেলা। মেঘ আপনাকে ছুঁয়ে যাবে, কখনো চারপাশ ঢেকে ফেলবে, আবার কখনো নিচে চলে যাবে। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত এখানে দেখার মতো অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এছাড়া, সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় থাকা রিসোর্ট এবং ক্যাফেটেরিয়ায় বসে পাহাড় ও মেঘ উপভোগ করার অনন্য সুযোগ রয়েছে।

অনুমতি ও খরচ

নীলগিরিতে প্রবেশ করতে হলে বান্দরবান সেনানিবাস থেকে পারমিশন নিতে হয়, যা সাধারণত চান্দের গাড়ির চালক আপনাকে সহায়তা করে দিতে পারেন। প্রবেশ ফি জনপ্রতি ৫০–১০০ টাকা। চান্দের গাড়ি ভাড়া পড়বে প্রায় ৪০০০–৫৫০০ টাকা (পুরো গাড়ি)।

নীলাচল – বান্দরবানের ব্যালকনি

বান্দরবান শহর থেকে মাত্র ৫ কিমি দূরে অবস্থিত নীলাচল ভিউ পয়েন্ট। এটি বান্দরবান জেলার পর্যটন কর্পোরেশন দ্বারা পরিচালিত একটি জনপ্রিয় স্পট।

কীভাবে যাবেন?

অটোরিকশা বা চান্দের গাড়িতে মাত্র ১৫–২০ মিনিটে নীলাচলে পৌঁছানো যায়। স্থানীয় ট্যাক্সি বা মোটরবাইকেও সহজে পৌঁছানো সম্ভব।

দর্শনীয়তা

নীলাচল থেকে পুরো বান্দরবান শহরকে উপর থেকে দেখা যায়। সূর্যাস্ত দেখার জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান। এখানকার মনোমুগ্ধকর পাহাড়ি দৃশ্য, বিশাল আকাশ এবং ঠান্ডা বাতাস মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। পর্যটকদের জন্য ফটোপয়েন্ট, বেঞ্চ ও ক্যাফে রয়েছে।

খরচ ও সময়

প্রবেশ ফি: ৩০–৫০ টাকা
স্থানীয় অটো ভাড়া: ৩০০–৫০০ টাকা (রিটার্ন ট্রিপসহ)
ভ্রমণের সময়: সকাল বা বিকেল (বৃষ্টির দিনে কাদামাটি সমস্যা হতে পারে)

রুমা বাজার – পাহাড়ি অভিযানের গেটওয়ে

রুমা বাজার হলো বান্দরবানের একটি উপজেলাভিত্তিক পাহাড়ি বাজার, যা থানচি ও বগালেকের পথে প্রথম বড় স্টপ। এখান থেকে আপনি বিভিন্ন হাইকিং ও ট্রেকিং অভিযানে যেতে পারেন, যেমন—বগালেক, কেওক্রাডং, জাদিপাই ঝর্ণা ইত্যাদি।

কীভাবে যাবেন?

বান্দরবান শহর থেকে রুমা বাজার যেতে চান্দের গাড়িতে প্রায় ২–৩ ঘণ্টা সময় লাগে। রাস্তা পাহাড়ি ও আঁকাবাঁকা হওয়ায় অভিজ্ঞ ড্রাইভার থাকা জরুরি। স্থানীয় পর্যায়ে অনুমতির প্রয়োজন হতে পারে।

দর্শনীয়তা ও ট্রেকিং

রুমা বাজারের আশেপাশে অনেক স্থানীয় উপজাতীয় পল্লী রয়েছে যেখানে চাকমা, মারমা ও বম জনগোষ্ঠী বসবাস করে। এখান থেকে হেঁটে বা গাইড নিয়ে যেতে পারেন বগালেক বা কেওক্রাডংয়ের দিকে। পাহাড়ি খাদ্য, বাঁশের তৈরি ঘর, ও পাহাড়ি নদীর ধারে বসে সময় কাটানো এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

খরচ ও প্রস্তুতি

চান্দের গাড়ি ভাড়া: ৫০০০–৭০০০ টাকা
স্থানীয় গাইড চার্জ: ৮০০–১৫০০ টাকা (নির্ভর করে ট্রিপের ওপর)
থাকার ব্যবস্থা: রুমা বাজারে রয়েছে ছোট ছোট গেস্টহাউস ও কটেজ

নিরাপত্তা ও প্রস্তুতির বিষয়

  • সরকারি আইডি কার্ড সাথে রাখতে হবে, বিশেষ করে নীলগিরি ও রুমা বাজারের পারমিশনের জন্য

  • পাহাড়ি রাস্তা অনেক ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হতে পারে, তাই বৃষ্টির দিনে বা রাতে যাত্রা না করাই ভালো

  • হালকা ব্যাগ, পানির বোতল, স্ন্যাকস, ফার্স্ট-এইড এবং ক্যামেরা অবশ্যই নিতে হবে

  • স্থানীয়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে এবং তাদের সংস্কৃতির প্রতি সম্মান দেখানো উচিত

শেষ কথা

বান্দরবানের পাহাড়ি দর্শনীয় স্থানগুলো প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। আপনি যদি প্রকৃতিকে হৃদয়ে ধারণ করেন এবং পাহাড়ের কোলে হারিয়ে যেতে চান, তাহলে নীলগিরি, নীলাচল ও রুমা বাজার আপনার জন্য স্বপ্নপুরী হয়ে উঠবে। একটু প্রস্তুতি, একটু সতর্কতা আর ভ্রমণের প্রতি ভালোবাসা থাকলে এই স্থানগুলো আপনাকে দেবে আজীবনের অভিজ্ঞতা। শুধু যাওয়ার অপেক্ষা – বাকিটা পাহাড় নিজেই বলে দেবে।

Continue Reading
You may also like...
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More in দর্শনীয় স্থান

To Top