সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা 2023 New Update

সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা

সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা:খুব সহজেই কোম্পানির কাজের ভিসাতে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত দেশ হলো সৌদি আরব। করমুক্ত বেতন ব্যবস্থার কারণে প্রবাসীদের প্রথম এবং প্রধান পছন্দের তালিকায় সৌদি আরবের অবস্থান সর্বদাই সমার্দিত। করোনা প্যান্ডেমিক সমস্যার কারণে বিগত ২০২০ এবং ২০২১ সালে সৌদি কোম্পানি ভিসার প্রক্রিয়া বন্ধ থাকলেও ২০২২ সালে থেকে সেটা আবার পুনারায় চালু করেছে সৌদি সরকার। 

নির্মাণ, প্রকৌশল, আইটি এবং কোম্পানি সহ আরো সকল সেক্টরে কর্মসংস্থানের অনেক বেশি সুযোগ রয়েছে এই দেশটিতে। তবে সম্প্রতিতে এই দেশটিতে কোম্পানির ভিসার চাহিদা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটির কোম্পানিগুলো বেতনের পাশাপাশি আরও অনেক সুবিধা প্রদান করে থাকে তাদের কর্মীদের। 

তাই আপনারা যারা কোম্পানি ভিসাতে সৌদি আরব যেতে চাচ্ছেন তাদের জন্য আজকের এই কন্টেন্টটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে চলছে। আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনযোগ সহকারে পড়লে সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা সম্পর্কে সুস্পষ্ট এবং বিস্তারিত তথ্য পাবেন।  

সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা ২০২৩ 

সৌদি সরকার তাদের প্রবাসী খাত কে আরও বেশি উন্নত এবং সৌদি আরবকে আরও ভালো করে ফুটিয়ে তুলতে  ২০২৩ সালের মে মাসের মাঝামাঝি সর্বপ্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে ই-ভিসা প্রদান করতে যাচ্ছে । আর এর কারণে এখন বাংলাদেশিরা খুব সহজেই সৌদি আরবে টুরিষ্ট, হজ্জ্ব , কাজ, পরাশোনা  এবং বিজনেসের জন্য খুব সহজেই সৌদি আরবে যেতে পারবে। 

এবং সেই সাথে সৌদি আরবের একটি ভিসা সংস্থা ২০২৩ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের বৃহত্তম শপিং মল জমুনা ফিউচার পার্কে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। বর্তমানে তারা টুরিষ্ট ভিসা প্রদানের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করেছে তারা খুব শীঘ্রই কাজের ভিসা ও প্রদান করা শুরু করবে বলে জানিয়েছে। 

বাংলাদেশে নিবন্ধিত মোট ১৮ টি ভিসা এজেন্ট আছে যারা প্রতিনিয়তই সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা সহ সকল ভিসাই প্রদান করে থাকেন। তবে এদের মধ্যে আল খালিদ মা কনসাল্টেন্সি সেন্টার এবং আল মাহমুদ কনসালটেন্সি সবচেয়ে বেশি ভালো। 

তাই আপনারা যারা ২০২৩ সালে কোম্পানি ভিসাতে সৌদি আরব যেতে চাচ্ছেন তাদের জন্য আরও বেশি সুবিধা হতে যাচ্ছে।  

সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসার ধরন

বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় কোম্পানিগুলার সবচেয়ে বড় কোম্পানি টি ও সৌদি আরবেরই কোম্পানি । আর এখানে বাংলাদেশের অনেক শ্রমিক কাজ করে। কাজের ধরণ, কাজের অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষাগতা যোগ্যতার উপরে নির্ভর করে কোম্পানি কাজের ভিসা ও বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। নিন্মে কয়েকটি কোম্পানি কাজের ভিসার ধরণ উল্লেখ করা হলোঃ 

  • কোম্পানির ড্রাইভিং ভিসা 
  • কোম্পানির ক্লিনার ভিসা
  • কোম্পানির আইটি ভিসা 
  • কোম্পানির কনস্ট্রাকশন ভিসা 
  • কোম্পানির টুরিস্ট গাইড ভিসা
  • কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার ভিসা 

এছাড়াও আরো অনেক সেক্টরে সৌদি সরকার কোম্পানি ভিসা প্রদান করে থাকে। তবে এই সকল ভিসা বেশি প্রদান করে থাকে। 

সৌদি আরবের কোম্পানি নাম 

প্রাকৃতিক সম্পদের আধিক্যের কারণে সৌদি আরবে অসংখ্যা কোম্পানি রয়েছে। তবে এদের মধ্যে অনেক কোম্পানিই বিশ্বের বড় কোম্পানীর মধ্যে অবস্থান করছে। নিন্মে সৌদি আরবের কয়েকটি কোম্পানির নাম দেওয়া হলোঃ 

  • আলবদর কোম্পানি 
  • বলদিয়া কোম্পানি 
  • পেপসি কোম্পানি 
  • আরামকো কোম্পানি 
  • আল মারাই কোম্পানি
  • ইনিশিয়াল কোম্পানি 
  • সাসকো কোম্পানি 
  • আল ইমামা কোম্পানি 
  • জুসুর ইমদাদ কোম্পানি 

উপরের প্রত্যেকটা কোম্পনিতে অনেক প্রবসী কাজ করে এবং সকল কোম্পানি গুলাই সৌদি আরবের অনেক ভালো এবং নামকরা কোম্পানি। তবে এর মধ্যে আরামকো হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানি। 

সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র 

ভিসার প্রসেসিং প্রধান ধাপ হলো ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা এবং সেগুলো সংরক্ষণ করা। সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসার জন্য যে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের প্রয়োজন তা নিন্মে দেওয়া হলোঃ 

  • একটি ছয় মাসের বেশি সময়ের পাসপোর্ট যেটির অবশ্যই ভিসার কাজ করার জন্য দুই পৃষ্ঠা ফাকা থাকতে হবে
  • আবেদনকারীর রঙিন ছবি যেটার ব্যাকগ্রাউন্ড অবশ্যই সাদা হবে
  • একটি পূর্ণাঙ্গ ভিসার আবেদন ফর্ম 
  • এম বি বি এস ডাক্তার সাক্ষরিত মেডিকেল রিপোর্ট এবং সেটির ফটোকপি
  • সৌদি আরবের স্পন্সরকারী কোম্পানীর চাকরির চিঠি, যেটি অবশ্যই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সৌদি চেম্বার অফ কমার্স দ্বারা প্রত্যয়িত। 
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট 
  • কর্মসংস্থানের নিকট থেকে চুক্তির একটি স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্র
  • আবেদনকারীর একাডেমিক সার্টিফিকেট 

উপরোক্ত কাগজপত্র প্রয়োজন হবে সৌদি আরবের কোম্পানীর ভিসার জন্য আবেদন করতে, তবে এবং ক্ষেত্রেই এর সাথে আরও কিছু কাগজপত্রের সংযোজন করতে হয়, এদের মধ্যে  থাকে কোভিড ভ্যাকসিনের সার্টিফিকেট এবং কোভিড আইডি কার্ড , নাগরিক এবং চারিত্রিক সনদ পত্র ও ভোটার আইডি কার্ড।     

সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া 

ভিসা নিশ্চিত হওয়া এবং ভিসা পাওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ভিসার আবেদন করা। একটা সময়ে ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া এবং জটিল এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার হলেও বর্তমানে ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া টি অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। 

সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসার আবেদনটি নিয়োগকর্তাই করে থাকে এবং এটাই আবশ্যিক নিয়ম। নিন্মে ভিসার আবেদন এবং রেসিডেন্সি পারমিট পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া উল্লেখ করা হলোঃ 

  • প্রথমে স্পন্সরকারী নিয়োগকর্তাকে সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে নিবন্ধন করতে হবে
  • মন্ত্রণালয় নিয়োগকর্তার সকল প্রবাসী কর্মীদের সম্পর্কে সকল তথ্য সহ একটি ইমিগ্রেশন ফাইল খুলবে
  • নিয়োগকর্তা সৌদি আরবের শ্রম মন্ত্রণালয়ের কাছে সৌদি কাজের ভিসার জন্য একটি আবেদন জমা দিবেন
  • অবেদনটি অনুমোদন হলে, শ্রম মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাবে এবং দুই সপ্তাহের মধ্যেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভিসা অনুমোদনের নাম্বার জারি করবেন 
  • কর্মচারীরা তালিকাভুক্ত নথি সহ সংশ্লিষ্ট সৌদি দূতাবাসে তাদের কর্মসংস্থান ভিসার আবেদন জমা দিবেন
  • দূতাবাস থেকে এক থেকে তিন সপ্তাহের  মধ্যে ভিসা ইস্যু করবে, এবং এই সময়ে কর্মচারীরা  সৌদি আরবে যেতে পারবেন
  • সৌদি আরবে পৌছে প্রথমেই কর্মচারীকে অবশ্যই শ্রম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রেসিডেন্সি পারমিট বা ইকামার জন্য আবেদন করতে হবে। 
  • শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদিত আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রেরণ করা হবে এবং সেখান থেকে পাসপোর্টের জন্য মহাপরিচালকের মাধ্যমে ইকামা জারি করা হবে । 

উল্লেখ্যঃ প্রত্যেক কর্মীচারীদেরই উচিত সর্বদা তাদের ইকামা বহন করা যাতে করে প্রমাণ করতে পারে যে তারা সৌদি আরবে বসবাস এবং কাজ করার জন্য অনুমুতি প্রাপ্ত। 

সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা ফি 

ভিসার কার্যক্রমের জন্য সরকার একটি নির্ধারিত ফি গ্রহণ করে থাকেন আর এটিকে ভিসা ফি বলা হয়ে থাকে। সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা ফি নিন্মে দেওয়া হলোঃ 

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সৌদি আরবের কোম্পানির ভিসা ফি কাজের স্পন্সরকারী ৫০% বহন করে থাকে। যদি ভিসার ফি কোম্পানি কতৃক ৫০% বহন করে এবং নিয়োগকর্তা যদি একজন সৌদি নাগরিক হয়ে থাকে তাহলে মোট ভিসা ফি ৭,২০০ সৌদি রিয়াল।  যার মধ্যে ইকামা পাওয়ার জন্য ৭৫০ রিয়াল, কাজের ভিসা এবং বীমা খরচের জন্য ৬০০০ রিয়াল এবং ৪৫০ রিয়াল। 

আর যদি নিয়োগকারী সৌদি নাগরিক না হয় কিন্তু ভিসার খরচ ৫০% বহন করে তাহলে মোট লাগবে ৮৪০০ রিয়াল । যার মধ্যে কাজের ভিসা ফি ৭২০০ রিয়াল। 

তাই অবশ্যই ভিসার ফি জমা দেওয়ার পূর্বে জেনে নিবেন স্পন্সর কারী সৌদি নাগরিক নাকি সৌদি প্রবাসী।    

সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসার বেতন 

অভিজ্ঞতা, কাজের ধরণ, শিক্ষাগত যোগ্যতার উপরে  সৌদি আরবের কোম্পানীর ভিসার বেতন নির্ভর করে থাকে। এছাড়াও একেক কোম্পানির বেতন একেক রকমের হয়ে থাকে। তবে অভিজ্ঞতাবিহীন এবং শুরুর দিকে সকল কর্মীদের বেতন প্রায় একই রকমের হয়ে থাকে। 

শুরুতে সৌদি আরকের  কোম্পানির ড্রাইভারদের বেতন হয়ে থাকে ১০০০ থেকে ১২০০ রিয়াল যা বাংলাদেশি টাকাতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজারের মতো হয়ে থাকে। যদি কেউ বড় গাড়ি চালায় তাহলে বেতন হয়ে থাকে ১২০০ থেকে ১৫০০ রিয়াল। 

অন্যান্য পেশা যেমন, কোম্পানির সাধারণ শ্রমিক কোম্পানির হেল্পার ক্লিনার সিকিউটিরি গার্ড সকল পেশার কর্মীদেরই বেতন ১০০০ থেকে ১২০০ রিয়াল হয়ে থাকে। তবে যারা ইঞ্জিয়ার এবং আইটি সেক্টরে কাজ করেন তাদের বেতন ১৫০০ রিয়ালের বেশি হয়ে থাকে।

যদি কেউ কোম্পানীর ভিতরে কাজ করে তবে তার বেতন শুরুতে ১০০০ রিয়াল হলেও আস্তে আস্তে সেটা বেড়ে ২৭০০ রিয়াল অব্দি হয়ে থাকে।   

সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসার বয়সসীমা 

সৌদি সরকারের আইন অনুযায়ী একজন কোম্পানি ভিসার অধিনের প্রবাসী শ্রমিক যদি শারিরীক ভাবে সুস্থ এবং সে তার ভিসার নির্দেশনাবলী মেনে কাজ করে এবং বৈধ ভিসার অধিকারী হয়ে থাকেন তাহলে তিনি ১৮ থেকে ৬০ বছর অব্দি কোম্পানি ভিসার অধিনে কাজ করতে পারবে।

তবে যদি কেউ কোম্পানির সাথে চুক্তিধারী হয়ে থাকে তবে এই ক্ষেত্রে সৌদি সরকারের বিশেষ অনুমুতি সাপেক্ষে ৬০ বছরের অধিক হলেও কাজ করতে পারবে।

সৌদি আরবের কোম্পানি  ভিসা চেক

একটা সময় ছিলো যখন শুধু ভিসার চেকিং পদ্ধতি এজেন্সি এবং দূতাবাসের মধ্যে থাকতো তবে বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে শুধু পাসপোর্ট দিয়ে ভিসা চেক করা যায়। নিন্মে সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা চেকিং পদ্ধতি দেওয়া হলো

  • https://visa.mofa.gov.sa//  এই লিংকে প্রবেশ করে হবে
  • ডানপাশের ত্রি হাইপেন অপশন থেকে বোঝার সুবিধার্তে ভাষা ইংরেজি করে নিতে হবে 
  • Query অপশনে গিয় “ভিসার আবেদন” টি নিবার্চন করুন 
  • আবেদন নাম্বার টি প্রদান করুন
  • পাসপোর্ট নাম্বার টি প্রদান করুন 
  • ক্যাপচা নাম্বার প্রদান করুন 
  • সবঠিক মতো প্রবেশ করিয়ে সার্চ অপশনে ক্লিক করুন। তাহলে পরবর্তী পৃষ্ঠাতে নিয়ে গিয়ে ভিসার আবস্থা দেখাবে। 

উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো আবলম্বন করে খুব সহজেই পাসপোর্টের সাহায্যে অনলাইনের মাধ্যমে আপনার ভিসার অবস্থা চেক করে নিতে পারেন।  

পরিশীষ্ট 

আরবরাজ্যের মধ্যে সৌদি আরব হলো সবচেয়ে বৃহত দেশ তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো ২০১৭ সালের একটি তথ্য অনুযায়ী সৌদি আরবের ৩০ বিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে ১০ বিলিয়নই প্রবাসী। তাই আপনারা যারা সৌদি আরবে কোম্পানি ভিসাতে কাজের জন্য যেতে চান তারা খুব সহজেই যেতে পারবেন। 

আশা করি আর্টিকেলের মাধ্যমে সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা সম্পর্কে একটি সুন্দর এবং স্পষ্ট তথ্য জানতে পেরেছেন। এর পরে ও যদি কোন তথ্য জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। 

আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে যদি ভালো লাগে তাহলে আমাদের zaihok.com ওয়েবসাইট আপনাদের বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *