কাতার কাজের ভিসা:বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধশালী একটি দেশ হলো কাতার। আর এই সমৃদ্ধশালী অর্থনীতির জন্য বিশ্বব্যাপী ব্যবসা, কর্মচারী এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য কাতার সবচেয়ে বেশি আকর্ষনীয় দেশ হিসেবে পরিচিত। মাথাপিছু সর্বোচ্চ জিডিপি হবার জন্য ব্যবসা এবং কর্মসংস্থানের অনেক সুযোগ রয়েছে । প্রতি বছরে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী পাড়ি জমায় কাতারে তাদের কর্মসংস্থানের জন্য।
করোনার জন্য ২০২০ এবং ২০২১ সালে কাতারে কাজের ভিসা বন্ধ থাকলেও সম্প্রতিতে আবার চালু হয়েছে। তাই আপনারা যারা কাজের উদ্দেশ্য নিয়ে কাতার যেতে চাচ্ছেন তাদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে আজকের আর্টিকেলটি।
মনোযোগ সহকারে আজকের আর্টিকেল টি পড়লে অবশ্যই কাতার কাজের ভিসা ২০২৩ সম্পর্কে একটি বিস্তারিত এবং সুস্পষ্ট তথ্য জানতে পারবেন।
কাতার কাজের ভিসা
বন্ধুরা আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মধ্যে জানব কাতার কাজের ভিসা সম্পর্কে সব ধরনের তথ্য। কাতার কাজের ভিসার সম্পর্কে আপনাদের যত রকমের তথ্য প্রয়োজন তা সব রকমের তথ্য পাবেন আমাদের এই আর্টিকেলটি। তাই মনোযোগ সহকারে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ুন।
কাতার ভিসা কবে খুলবে ২০২৩
ফুটবল বিশ্বকাপ কাতারে অনুষ্ঠিত হবার কারণে কাতার সরকার এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছিলেন। বিশ্বকাপ শেষ হবার পরে এদের অনেককেই বাসায় ফিরে আসতে হয়েছিলো। কিন্তু ২০২৩ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি প্রবাসী কল্যাণ এবং বৈদাশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করেন যে আবার নতুন কর্মীদের কাতারে পাঠানোর চুক্তি করেছেন।
তাই ২০২৩ সালে যারা কাতারে কাজের ভিসাতে যেতে চাচ্ছেন তারা খুব সহজেই প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কাতার কাজের ভিসাতে যেতে পারবেন।
কাতারে কোন কাজের চাহিদা বেশি
কাতারের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক উচ্চ হবার কারণে কাতার এ অসংখ্য কাজের চাহিদা রয়েছে। তবে এদের মধ্যে কয়েকটি পেশার খুব বেশি চাহিদা রয়েছে। এগুলো হলোঃ
- কৃষিকাজ
- ইলেকট্রিশিয়ান
- গার্মেন্টস
- কনস্ট্রাকশন
- মেকানিক্যাল
- রেস্টুরেন্ট
- সেফ
- ক্লিনার
- ফ্যাক্টরি
- লেবার।
কারাতে উপরোক্ত কাজ গুলোর সবথেকে বেশি চাহিদা রয়েছে। তাই যারা কাতারে যেতে ইচ্ছুক তারা উপরোক্ত কাজের জন্য কাতারে যেতে পারেন।
কাতার কাজের ভিসার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
কাতারের ওয়ার্ক ভিসা পাওয়ার জন্য একজন কর্মীদের ওয়ার্ক পারমিট এবং রেসিডেন্স পারমিট থাকতে হবে। একটি ওয়ার্ক পারমিটের আবেদনের জন্য যেসকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের প্রয়োজন তা নিন্মের উল্লেখ করা হলোঃ
- কাতারের কাজের কর্মসংস্থান চুক্তি
- শ্রম মন্ত্রণালয়ের কতৃক একটি যথাযথভাবে পূরণকৃত আবেদন ফর্ম
- এম বি বি এস ডাক্তার স্বাক্ষরিত একটি মেডিকেল সার্টফিকেট
- একটি ভ্যালিড পাসপোর্ট যেটির বয়স ছয় মাসের বেশি এবং মেয়াদ ১ বছরের বেশি সেই সাথে পাসপোর্টে ভিসার কাজের জন্য সর্বনিন্ম ২ পৃষ্ঠা ফাকা থাকতে হবে
- কাজের সাথে সম্পৃক্ত একাডেমিক সার্টিফিকেট
- নিয়োগকর্তার অভিবাসন কার্ড
- কর্মসংস্থান ভিসা
- আঙ্গুলের ছাপ সহ বায়োমেট্রিক তথ্য
- রঙিন ছবি
এছাড়াও রেসিডেন্সিয়াল পারমিটের জন্য যেকল কাগজপত্র প্রয়োজন সেগুলো নিন্মে দেওয়া হলো
- একটি বৈধ পাসপোর্ট
- কর্মচারীর পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি যেটা ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা হতে হবে
- কর্মসংস্থান ভিসা
- কোম্পানির বাণিজ্যিক নিবন্ধনের একটি ফটোকপি
- বাসার ইমিগ্রেশন কার্ডের একটি ফটোকপি
- কর্মচারীর মেডিকেল সার্টিফিকেট।
কাতার কাজের ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া
কাতারের কাজের ভিসার পরিচালনা নিয়োগকর্তা দ্বারা হয়ে থাকে, তাই কর্মীদের সকল নথীপত্র নিয়োগকর্তাদের নিকট জমা দিতে হয়। আর নিয়োগকর্তাগণই ভিসার আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করে থাকে। নিন্মে ভিসার আবেদন প্রক্রিয়াটি তুলে ধরা হলোঃ
- নিয়োগ কর্তাকে তাদের ট্রেড লাইন্সের কপি এবং তাদের অন্যান্য কাগজপত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন বিভাগে জমা দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন হয়ে গেলে একটি ইমিগ্রেশন কার্ড এবং একটি রিপ্রেজেন্টেটিভ কার্ড দেওয়া হয়।
- নিয়োগ কর্তাকে তাদের কর্মীদের প্রতিটি শ্রমিকের জন্য ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন করতে হবে এবং আবেদন প্রক্রিয়ার সব নথিগুলো অবশ্যই আরবি ভাষায় জমা দিতে হবে এবং সেই সাথে কর্মীদের চাকরির অবস্থান এবং জাতীয়তাও প্রকাশ করতে হবে। এর মধ্যে যে সকল কর্মীগন শ্রম মন্ত্রণালয়ের থেকে ওয়ার্ক পারমিটের অনুমোদন পাবে তারা কাতার যেতে পারবে।
- শ্রম মন্ত্রণালয় নথি জমা দেওয়ার পরে কর্মীদের আগমনের সাত দিনের মধ্যে কর্মীদের বসবাসের অনুমতির জন্য একটি আবেদন করতে হবে।
রেসিডেন্স পারমিট ইস্যু হবার পরে শ্রমিকেরা শুধু তাদের ভিসা ইস্যু করা কোম্পানির জন্য কাজ শুরু করতে পারবে। কর্মীদের অবশ্যই তাদের দেশ ছাড়ার পূর্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কতৃক জারি করা এবং অনুমোদিত বহিগর্মন পারমিট থাকতে হবে।
কাতার কাজের ভিসার দাম কত ২০২৩
কাতার কাজে ভিসার খরচ অন্যান্য দেশের ভিসা খরচের থেকে অনেকাংশেই বেশি হয়ে থাকে। সাধারনত কাতারের কর্মসংস্থান এন্ট্রি ভিসা ফি ২০০ কাতার রিয়াল এবং সেই সাথে ওয়ার্ক রেসিডেন্স পারমিটের জন্য ৫০০ কাতার রিয়াল প্রদান করতে হয়।
তবে সম্পূর্ণ কাতারের যাওয়ার খরচ টা আনুমানিক পাঁচ থেকে ছয় লক্ষ টাকা হয়ে থাকে। আপনি পাঁচ ছয় লক্ষ টাকার মধ্যেই কাতার যেতে পারবেন । এই টাকার মধ্যেই ভিসা ফি থেকে শুরু করে সকল পারমিট এবং প্লেন ভাড়া অব্দি হয় যাবে।
কাতার কোম্পানি ভিসা বেতন কত
কাতার সরকার তাদের প্রাইভেট এবং পাবলিক উভয় সেক্টরের জন্যই ভিসা প্রদান করে থাকে। আর এই দুই সেক্টরের বেতনের ও কিছুটা প্রার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। যারা কাতারে প্রাইভেট কোম্পানি গুলোতে কাজ করে তাদের বেতন সাধারণত ৫০ থেকে ৭০ হাজার হয়ে থাকে।
তবে অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার উপর নির্ভর করে এই বেতনের পরিমাণ টা কম বেশি হয়ে থাকে। তবে যারা কোম্পানী গুলোর বড় বড় গাড়ি চালায় তাদের বেতন সাধারণ কর্মীদের বেতনের থেকে বেশি হয়ে থাকে।
কাতার কাজের ভিসার বয়স সীমা
কাতারে কাজের বয়স সীমা নির্ভর করে আপনি কোন সেক্টরে কাজ করতেছেন সেটার উপরে। আপনি যদি কাতারের পাবলিক সেক্টরে কাজ করেন তাহলে ৬০ বছর হলে অবসরে যেতে হবে তবে আপনি বেসরকারি সেক্টরে কাজ করলে এই ক্ষেত্রে বয়সের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে প্রবাসীরা ৬০ বছরের বেশি হয়ে গেলে তারা তাদের ভিসা নবায়ন এবং স্পন্সর করতে পারবে না ।
কাতার কাজের ভিসা সুবিধা
কাতারে ওয়ার্ক রেসিডেন্স পারমিট মঞ্জুর হওয়ার পরে কর্মীরা অনেক সুবিধা পেয়ে থাকে। নিন্মে এগুলো দেওয়া হলোঃ
- অনেক পরিষেবাতে এক্সেস যেমন, অন্যান্য পারমিট এবং লাইসেন্স অ্যাপ্লিকেশন
- ঋণের জন্য আবেদন
- স্পন্সর ভিসা প্রদান করা ক্ষমতা
- বাসা ভাড়ার ক্ষেত্রে চুক্তি এবং সাক্ষর করার ক্ষমতা
কাতার ভিসা চেক অনলাইন
কাতার সরকারের MOI ওয়েবসাইটের মাধ্যে খুব সহজেই কাতার ভিসার অবস্থা অনলাইনে মাধ্যমে চেক করা সম্ভব। নিন্মে কাতার কাজের ভিসা অনলাইনের মাধ্যমে চেক করার পদ্ধতি দেওয়া হলোঃ
- MOI Website এর এই লিংকে প্রবেশ করতে হবে।
- ভিসা সার্ভিস অপশনে প্রবেশ করতে হবে
- ভিসা ইনকুয়েরি এবং প্রিন্টিং অপশনে ক্লিক করতে হবে
- ভিসা নাম্বার প্রবেশ / পাসপোর্ট নাম্বার প্রবেশ করাতে হবে
- জাতীয়তা বাদ নির্বাচন করতে হবে
- ক্যাপচা পূরণ করতে হবে
- সবকিছু ঠিক থাকলে সাবমিট অপশনে ক্লিক করতে হবে।
উপরোক্ত পদ্ধতি গুলো ফলো করার মাধ্যমে খুব সহজেই ভিসার অবস্থা চেক করা সম্ভব। তবে সম্প্রতি সময়ে কাতার সরকার বাংলাদেশ নেপাল শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশ পাকিস্তান ভারত এবং ফিলিপাইনের জন্য নতুন একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যম খুলে দিয়েছে। যেটার মাধ্যমেও খুব সহজেই এই সকল দেশের নাগরিকেরা তাদের ভিসার অবস্থা দেখে নিতে পারে। নিন্মে চেকিং পদ্ধতি টি দেওয়া হলোঃ
- https://www.qatarvisacenter.com/ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে
- ভাষা এবং দেশ সিলেক্ট করতে হবে
- ট্র্যাক অ্যাপ্লিকেশন এ ক্লিক করতে হবে
- ভিসা এবং পাসপোর্ট ক্যাপচা পূরণ করে সাবমিট করতে হবে
উভয় পদ্ধতির মাধ্যমে খুব সহজে ভিসার অবস্থা দেখে নিতে পারবেন।
পরিশীষ্ট
আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে কাতার কাজের ভিসা ২০২৩ সম্পর্কে একটি বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন, এর পরেও যদি কোন প্রশ্ন জানার থাকে তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।
আরো পড়ুন